-->
বছর বা বর্ষপঞ্জি কি

বছর বা বর্ষপঞ্জি কি


বছর
এক বছর বলতে সূর্যকে ঘিরে কক্ষপথে পৃথিবী ঘোরার সময় একই ঘটনা দুইবার ঘটার মধ্যে সময়ের ব্যবধানকে বোঝায়। যেকোন গ্রহের ক্ষেত্রেই এই সংজ্ঞা প্রযোজ্য। যেমন - মাঙ্গলিক বছর বলতে মঙ্গল গ্রহের জন্য এক বছরকে বোঝায়।

বাংলা বর্ষপঞ্জি বা বাংলা সন
বাংলা বর্ষপঞ্জি, যা সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত হয়, তাতে অধিবর্ষের ধারণা দেখা যায় না। পরবর্তিতে বাংলাদেশে বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রস্তুত নতুন বর্ষপঞ্জিমতে বাংলা বর্ষপঞ্জিতেও গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসরণে ফেব্রুয়ারি মাসের সমসাময়িক বাংলা মাসে, সাধারণত ফাল্গুন মাসে, প্রতি চার বছর পর পর একবার অতিরিক্ত একটি দিন গণনা করা হয়। তবে ভারতে ও বাংলাদেশের হিন্দুগণ ধর্মীয় কারণে এই রীতি অনুসরণ করেন না। সনাতনী বাংলা বর্ষপঞ্জিতে অধিবর্ষ একটু জটিল নিয়মে আসে। এক্ষেত্রে সাল থেকে ৭ বিয়োগ করে ৩৯ দিয়ে ভাগ করতে হয়। যদি ভাগশেষ শূন্য বা চার দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য হয় তবে ঐ সালকে অধিবর্ষ ধরা হয়। আর অধিবর্ষের অতিরিক্ত এক দিন চৈত্র মাসে যোগ হয়। এই হিসাব অণুযায়ী প্রতি ৩৯ বছরে ১০টি অধিবর্ষ আসে, যেটা জোতির্বৈজ্ঞানিক বর্ষপঞ্জির সাথে যথেষ্ট সামাঞ্জস্যপূর্ণ। তবে অতি লম্বা সময় ধরে এই নিয়ম অনুসরণ করে গেলে সম্ভবত সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।

ইসলামিক বর্ষপঞ্জি
ইসলামী ক্যালেন্ডারের পরিমার্জিত ও গণনাকৃত সংস্করণগুলিতে নিয়মিত লিপ দিন নেই, যদিও উভয়ই চন্দ্র মাসের ২৯ বা ৩০ দিন ধারণ করে, সাধারণত বিকল্প ক্রমানুসারে। যাইহোক, মধ্যযুগে ইসলামিক জ্যোতির্বিদদের দ্বারা ব্যবহৃত ট্যাবুলার ইসলামী ক্যালেন্ডার এবং এখনও কিছু মুসলমানদের দ্বারা ব্যবহৃত একটি ৩০ বছরের চক্রের ১১ বছরের মধ্যে চন্দ্র বছরের শেষ মাসে একটি নিয়মিত লিপ দিন যোগ করা হয়। এই অতিরিক্ত দিন গত মাসের শেষে পাওয়া যায়, ধূ-ল-হিজা, যা হজ মাসেরও।

আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক গৃহীত হিজরি-শমসী ক্যালেন্ডার সৌর হিসাবের উপর ভিত্তি করে তৈরি এবং এর কাঠামোর সাথে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের অনুরূপ যেটি প্রথম বছরের হিজড়া দিয়ে শুরু হয়।

পুরোনো হাঙ্গেরীয় বর্ষপঞ্জি
ঐতিহাসিকভাবে হাঙ্গেরি একটি ১২ মাসের বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করতো যা প্রকৃতি রাশিচক্রর বলে মনে হতো। কিন্তু পরে তা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির সাথে সম্পকৃত ছিল।

পুরোনো মিশরীয় বর্ষপঞ্জি
প্রাচীন মিশরীয় লোকেরা একটি বর্ষপঞ্জির ব্যবহার করতো যা ৩৬৫ দিন দীর্ঘ ছিল। বর্ষপঞ্জিকাটি ১২ মাসে ভাগ করা ছিল এবং প্রত্যেক মাস ৩০ দিনে ভাগ ছিল। বছর শেষে অতিরিক্ত ৫ দিন যোগ করা হতো। মাস গুলো ৩ সপ্তাহে ভাগ করা ছিল এবং প্রত্যেক সপ্তাহ ১০ দিনে ভাগ ছিল। কারণ প্রাচীন মিশরীয় বছর সৌর বছরের চেয়ে এক চতুর্থাংশ কম ছিল।

ইরানীয়ান/পেরসীয়ান বর্ষপঞ্জি
ইরানী/পেরসীয়ান বর্ষপঞ্জি, বর্তমানে ইরান এবং আফগানিস্তানে ব্যবহার হচ্ছে। তাতেও ১২ মাস রয়েছে। পেরসীয়ান নামগুলো তদ্বোধক চিহ্নেতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ফরাসি প্রজাতন্ত্রের বর্ষপঞ্জি
এই বর্ষপঞ্জিটি ফরাসি বিপ্লব সময় প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং ফরাসি সরকার একে ১৭৯৩ সাল থেকে প্রায় বারো বছরের ব্যবহার করেছিল। এটি ১২ মাসের বর্ষপঞ্জি এবং প্রত্যেক মাস ৩০ দিনের ছিল। ১০ দিনে ১ সপ্তাহ যাকে বলা হতো দেকাদেস। একে তিন মাস করে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। অতিরিক্ত পাচ অথবা ছয় দিন যথাযথ যোগ করার প্রয়োজন বোধ হয়েছে ক্রান্তি বছর জন্য যা প্রত্যেক বছরের শেষে মাস গুলোর পরে স্থাপিত করা হতো। প্রত্যেক চার বছর পর একটি অধিবর্ষ ছিল যাকে বলা হতো ফ্রানচাড। এইটি শরত্‍কাল থেকে শুরু হতো:
শরত্‍কাল☞ভেনদেমিয়াইরে,ব্রুমাইরে,ফ্রিমাইরে।
শীতকাল☞নিভসে,প্লুভিওসে,ভেন্তসে।
বসন্তকাল☞জেরমিনাল,ফ্লরেয়াল,প্রাইরিয়াল।
গ্রীষ্মকাল☞মেসসিদর,থেরমিদর,ফ্রুকটিদর।

সিংহলি বর্ষপঞ্জি
সিংহলি বর্ষপঞ্জি হল বুদ্ধ বর্ষপঞ্জি যা সিংহলি ভাষায় নামগুলোর সঙ্গে শ্রীলঙ্কাতে বর্ষপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার হয়। প্রত্যেক পূর্ণিমা পয়, একটি বুদ্ধ চান্দ্রমাসের শুরু চিহ্নিত করে। প্রথম মাস হল ভেসাক। সিংহলি এবং তামিল নব্বর্ষ শুরু হয় হিন্দু সৌর বর্ষপঞ্জির অনুসারে (সাধারণত ১৪ এপ্রিল), যা বুদ্ধ বর্ষপঞ্জিতে সম্পর্কহীন ঘটনা।

নিসগা বর্ষপঞ্জি
নিসগা বর্ষপঞ্জি গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণয় প্রত্যেক মাসে সিদ্ধান্ত নেয় কি ধরনের ফসল তুলবে যা পিছের মাস গুলোতে বুনে ছিল।

সিংহলি বর্ষপঞ্জি
সিংহলি বর্ষপঞ্জি হল বুদ্ধ বর্ষপঞ্জি যা সিংহলি ভাষায় নামগুলোর সঙ্গে শ্রীলঙ্কাতে বর্ষপঞ্জি হিসেবে ব্যবহার হয়। প্রত্যেক পূর্ণিমা পয়, একটি বুদ্ধ চান্দ্রমাসের শুরু চিহ্নিত করে। প্রথম মাস হল ভেসাক। সিংহলি এবং তামিল নব্বর্ষ শুরু হয় হিন্দু সৌর বর্ষপঞ্জির অনুসারে (সাধারণত ১৪ এপ্রিল), যা বুদ্ধ বর্ষপঞ্জিতে সম্পর্কহীন ঘটনা।

বাংলা/হিন্দ বর্ষপঞ্জি
বাংলা/হিন্দু বর্ষপঞ্জির মাসের নাম করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ভারতে প্রচলিত হিন্দু সৌর পঞ্জিকানুসারে বঙ্গাব্দের মাসসমূহ এবং তাদের দৈর্ঘ্যবৈশাখ ৩০ দিন। জ্যৈষ্ঠ ৩১ দিন। আষাঢ় ৩১ দিন। আষাঢ় ৩১ দিন। শ্রাবণ ৩১ দিন। ভাদ্র ৩১ দিন। আশ্বিন ৩০ দিন। কার্তিক ২৯ দিন। অগ্রহায়ণ ২৯ দিন। পৌষ ২৯ দিন। মাঘ ২৯ দিন। ফাল্গুন ২৯ দিন। চৈত্র ৩১ দিন।

ইসলামি বর্ষপঞ্জি
ইসলামি বর্ষপঞ্জিতে ও বারো মাস রয়েছে। তাদেরকে নাম ক্রমাণয়ে লেখা হলোমুহররম ৩০ দিন। সফর ২৯ দিন। রবিউল আউয়াল ৩০ দিন। রবিউস সানি ২৯ দিন। জমাদিউল আউয়াল ৩০ দিন।জমাদিউস সানি ২৯ দিন। রজব ৩০ দিন। শা'বান ২৯ দিন। রমজান ৩০ দিন। শাওয়াল ২৯ দিন।জ্বিলকদ ৩০ দিন। জ্বিলহজ্জ ২৯ দিন অথবা ৩০ দিন।

জুলিয়ান এবং গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি
জুলিয়ান বর্ষপঞ্জির পূর্বে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিরও বারো মাস রয়েছেঃ
৩১ দিন
২৮ দিন, ২৯ দিন অধিবর্ষ
৩১ দিন
৩০ দিন
৩১ দিন
৩০ দিন
৩১ দিন
৩১ দিন
৩০ দিন
১০
৩১ দিন
১১
৩০ দিন
১২
৩১ দিন
মাস মাস হলো সময় গণনা করার একটি একক, যা পঞ্জিকাতে ব্যবহার করা হয়। সাধারণত চাঁদের পূর্ণ একটি পরিক্রমকালের সাথে এর সম্পর্ক আছে। মাসের ধারণার উদ্ভব হয় চাঁদের কলা হতে। এধরণের মাসকে চান্দ্র মাস বলা হয়ে থাকে। পুরাতত্ত্ববিদেরা পঞ্জিকা হিসাবে ব্যবহৃত মাপকাঠি পেয়েছেন, যা দেখে বোঝা যায়, প্যালিওলিথিক যুগ হতে মানুষ চাঁদের কলার ভিত্তিতে মাস হিসাব করে আসছে।

☞ এই পোষ্ট সম্পর্কে যদি আপনার কোন প্রশ্ন☞জিজ্ঞাসা☞সমস্যা☞তথ্য জানার থাকে তাহলে আপনি☞কমেন্ট করলে আপনাকে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করব☞☞☞ "বছর বা বর্ষপঞ্জি কি"

Post a Comment

যোগাযোগ ফর্ম

Name

Email *

Message *